বিসিএস আবেদনের যোগ্যতা, সিলেবাস, ক্যাডার,বুকলিস্ট
বিসিএস নিয়ে যত কথা
*************************************
🇧🇩বিসিএস এ আবেদন করার যোগ্যতা, প্রিলি সিলেবাস, বইয়ের লিস্ট ও ক্যাডারসমূহ সহ সব কিছু নিয়ে বিস্তারিত পোস্ট। আশা করি বিসিএস নিয়ে আপনার মনের সকল প্রশ্নের অবসান হবে।
🇧🇩বিসিএস এ আবেদন করার শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ
এসএসসি থেকে স্নাতক পর্যন্ত সবগুলো পরীক্ষায় যেকোন দুটিতে দ্বিতীয় শ্রেণী বা সমমান এবং একটি তৃতীয় শ্রেণী বা সমমান। এর নিচে হবে না।
তবে পাসকোর্স ধারীদের স্নাতকোত্তর লাগবে।
আপনারা হয়তো ভাবছেন জিপিএ বা সিজিপিএ এর পয়েন্ট কিভাবে হিসেব করা হবে?
♦SSC, HSC কিংবা সমমান পরীক্ষার ফলাফলের ক্ষেত্রে-
জিপিএ ৩.০০ বা তদূর্ধ প্রথম বিভাগ
জিপিএ ২.০০ থেকে ৩.০০ এর কম দ্বিতীয় বিভাগ
♦অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রদত্ত সিজিপিএ এর ক্ষেত্রে-
(৪ পয়েন্ট স্কেলে)
৩.০০ পয়েন্ট বা তদূর্ধ - প্রথম বিভাগ/শ্রেণি
২.২৫ বা তদূর্ধ কিন্তু ৩.০০ এর কম দ্বিতীয় বিভাগ/শ্রেণি
(৫ পয়েন্ট স্কেলে)
৩.৭৫ পয়েন্ট বা তদূর্ধ - প্রথম বিভাগ/শ্রেণি
২.৮১৩ বা তদূর্ধ কিন্তু ৩.৭৫ এর কম দ্বিতীয় বিভাগ/শ্রেণি
বিসিএস প্রিলি. প্রস্তুতির বুকলিস্টঃ
১। গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতাঃ
৫ম শ্রেণি থেকে নবম-দশম শ্রেণির বোর্ড বইসমূহের ম্যাথগুলো বেশি বেশি প্যাকটিস করুন। সম্ভব হলে নবম শ্রেণির উচ্চতর গণিত বইটিও সংগ্রহে রাখুন। বোর্ড বই শেষ হলে বাজারের যেকোন একটি গাইড বই থেকে প্র্যাকটিস করে ফেলুন (MP3 জর্জ সিরিজের বইটা দেখতে পারেন)
৪০তম বিসিএস প্রিলিতে বোর্ড থেকে কমন ছিল।
এবং মানসিক দক্ষতার জন্য MP3 জর্জ সিরিজের /অথবা প্রফেসর’র সিরিজের যেকোনো একটি বই ফলো করতে পারেন।
২। English Grammar & literature:
ইংলিশের জন্য English Tutor by Kabial Noor স্যারের বইটি ফলো করুন, বইটিতে প্রচুর ব্যাখ্যা, গ্র্যাফসহ সহজবোধ্য উপস্থাপনা আছে, বইটি গোছানো থাকায় আপনি নিজে নিজেই পড়ে ইংলিশে অধিক মার্ক তুলতে পারবেন । সম্ভব হলে PC Dash এর এপ্লাইড গ্রামারটিও রাখতে পারেন।
Literature জন্য ওরাকলের মিরাকল বই পড়লেই চলবে।
৩। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য:
বাংলা ব্যাকরণের জন্য নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ বোর্ড বইটি পড়ুন এবং সাথে বাজারের গাইড বই জর্জের MP3/ প্রফেসর’স বইটি পড়ুন, বাংলা সাহ্যিতসহ কভার হয়ে যাবে।সম্ভব হলে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাস (সৌমিত্র শেখর) বইটাও দেখতে পারেন।
৪। সাধারণ জ্ঞান:
বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক:- বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় (৯ম-১০ম শ্রেণি), আরিফ খানের সহজ ভাষায় বাংলাদেশের সংবিধান , বাংলাদেশ ও বিশ্ব (জাহিদ সোহেলের) মানচিত্রটি পড়ুন । পাশাপাশি বাজারের গাইড বই জর্জের MP3 পড়ে ফেলুন ।
এবং সাম্প্রতিকের জন্য প্রতি মাসের কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স ও বিশেষ সংখ্যাটা দেখুন।
৫। সাধারণ বিজ্ঞান:
সাধারণ বিজ্ঞান (৮ম, ৯ম-১০ম শ্রেণি) বোর্ড বইটি দেখুন। এবং বাজারের যেকোনো একটা গাইড বই পড়ুন, মনে রাখবেন বিজ্ঞানের বিগত সালের প্রশ্ন কমন বেশি পড়ে, তাই যত বিগত সালের প্রশ্ন আছে পড়ে ফেলুন।
৬। কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি:
তথ্য ও প্রযুক্তি বই (৯ম-১০ম শ্রেণি)। উচ্চ মাধ্যমিক কম্পিউটার ১ম ও ২য় পত্র। পাশাপাশি বাজারের ইজি কম্পিউটার বইটি পড়ুন।
৭। ভূগোল,পরিবেশ ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা:
মাধ্যমিক ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বই (৯ম-১০ম)। পাশাপাশি বাজারের গাইড বই প্রফেসর’স/MP3 বইটি পড়ুন।
৮। নৈতিকতা ও মূল্যবোধ এবং সুশাসন:
উচ্চ মাধ্যমিক পৌরনীতি ১ম ও ২য় পত্র। পাশাপাশি প্রফেসরসের নৈতিকতা,মূল্যবোধ ও সুশাসন গাইডটি পড়লেই এনাফ।
🇧🇩বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার সিলেবাস এবং মানবন্টন।
সর্বমোট--- ২০০ নম্বর
১) বাংলাঃ ৩৫
-> ভাষা - ১৫
-> সাহিত্য - ২০
২) ইংরেজিঃ ৩৫
-> ভাষা - ২০
-> সাহিত্য - ১৫
৩) বাংলাদেশ বিষয়াবলীঃ ৩০
-> বাংলাদেশের জাতীয় বিষয়াবলী - ০৬
-> বাংলাদেশের কৃষিজ সম্পদ - ০৩
-> বাংলাদেশের জনসংখ্যা ও আদমশুমারী - ০৩
-> বাংলাদেশের অর্থনীতি - ০৩
-> বাংলাদেশের শিল্প ও বাণিজ্য - ০৩
-> বাংলাদেশের সংবিধান - ০৩
-> বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা- ০৩
-> বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থা - ০৩
-> বাংলাদেশের জাতীয় অর্জন ও অন্যান্য - ০৩
৪) অান্তর্জাতিক বিষয়াবলীঃ ২০
-> সাম্প্রতিক ও চলমান ঘটনাপ্রবাহ্ - ০৪
-> বৈশ্বিক ইতিহাস, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা ভূরাজনীতি - ০৪
-> আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও আন্তরাষ্টীয় ক্ষমতা সম্পর্ক - ০৪
-> আন্তর্জাতিক পরিবেশগত ইস্যু ও রাষ্টনীতি - ০৪
-> আন্তর্জাতিক সংগঠন এবং বৈশ্বিক অর্থনীতি - ০৪
৫) ভূগোল পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাঃ ১০
৬) বিজ্ঞানঃ ১৫
-> ভৌত বিজ্ঞান -০৫
-> জীব বিজ্ঞান - ০৫
-> আধুনিক বিজ্ঞান - ০৫
৭) কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তিঃ ১৫
-> কম্পিউটার - ১০
-> তথ্যপ্রযুক্তি - ০৫
৮) গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতাঃ ৩০
গাণিতিক যুক্তিঃ ১৫
-> পাটিগণিত - ০৩
-> বীজগণিত - ০৬
-> জ্যামিতি - ০৩
-> পরিসংখ্যান ও অন্যান্য - ০৩
মানসিক দক্ষতাঃ ১৫
৯) নৈতিকতা মূল্যবোধ ও সুশাসনঃ ১০
🇧🇩বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস ক্যাডারের সংখ্যা ২৬টি।ক্যাডার গুলো হলঃ
১. বিসিএস(প্রশাসন)
২. বিসিএস (খাদ্য)
৩. বিসিএস (কৃষি)
৪. বিসিএস (বন)
৫. বিসিএস (মৎস্য)
৬. বিসিএস (পশুপালন)
৭. বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা)
৮. বিসিএস (কারিগরি শিক্ষা)
৯. বিসিএস (বাণিজ্য)
১০. বিসিএস (পরিসংখ্যান)
১১. বিসিএস (গণপূর্ত)
১২. বিসিএস (জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশল)
১৩. বিসিএস (সড়ক ও জনপথ)
১৪. বিসিএস (নিরীক্ষা ও হিসাব)
১৫. বিসিএস (শুল্ক ও আবগারী)
১৬. বিসিএস (কর)
১৭. বিসিএস (পররাষ্ট্র বিষয়ক)
১৮. বিসিএস (স্বাস্থ্য)
১৯. বিসিএস (পরিবার পরিকল্পনা)
২০. বিসিএস (তথ্য)
২১. বিসিএস (ডাক)
২২. বিসিএস (পুলিশ)
২৩. বিসিএস (আনসার)
২৪. বিসিএস (রেলওয়ে পরিবহন ও বাণিজ্যিক)
২৫. বিসিএস (রেলওয়ে প্রকৌশল)
২৬. বিসিএস (সমবায়)
🇧🇩ফর্মপূরণে সতর্কতা অবলম্বনঃ
------------------------
আপনার নাম , পিতার নাম , মাতার নাম , এনআইডি , স্থায়ী ঠিকানা, জন্মসাল, কোটার অপশন যদি থাকে তাহলে সতর্কতার সাথে পূরণ করুন । কারণ এই ধরনের ভুলকে গুরতর ভুল ধরা হয় । এইসব অপশন ভুলভাবে পূরণ করলে অনেক ক্ষেত্রে আবেদন করে সংশোধন করা গেলেও টেনশনে প্রস্তুতি নিতে সমস্যা হবে ।
আপনার অসচেতনতায় উপরোক্ত ভুলের কারনেও গেজেট আটকে যেতে পারে। বিগত বিসিএস গুলোতে এসব ভুলের কারণে গেজেট আটকে গেছে অনেকের । অর্থাৎ তাঁরা চাকরি পেয়েও চাকরিতে জয়েন করতে পারেননি । আবার অনেকে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে চাকরিতে যোগদান করতে পেরেছেন । তাই দোকানে ফর্ম পূরণ নিজ দায়িত্বে , সচেতনভাবে করুন। দোকানদার আপনার ফর্ম ভুলভাবে পূরণ করলেও তার কিছু যায় আসে না । ফর্ম সাবমিট করার পর টাকা পাঠানোর জন্য ৭২ ঘণ্টা সময় থাকে । তাই তাড়াহুড়া না করে ভালোভাবে চেক করে টাকা পেই করুন । মনে রাখবেন একবার টাকা পরিশোধ হয়ে গেলে সেই আবেদনই চূড়ান্ত । তাই টাকা পরিশোধ করার পূর্বে ভালোভাবে নিজের ফর্ম নিজে চেক করুন। কোনো কারনে ভুল ভাবে ফর্ম পূরণ হয়ে গেলে টাকা পরিশোধ না করে ৭২ ঘণ্টা পর আবার নতুনভাবে ফর্ম পূরণ করে টাকা পরিশোধ করুন । কারণ ৭২ঘণ্টার মধ্যে টাকা পরিশোধ না করলে উক্ত আবেদন স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বাতিল হয়ে যায় । তাই শেষ সময়ের জন্য বসে না থেকে আগেভাগেই আবেদন করে ফেলুন । কোন কারণে আবেদন ভুলভাবে পূরণ করে টাকা পরিশোধ করে ফেললে দ্রুত সময়ের মধ্যেই পিএসসিতে যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করতে হবে যাতে নতুনভাবে আবেদন ফর্ম পূরণ করা যায়। আপনি আবেদন ফর্মে আপনার সহজ ও ছোট স্বাক্ষর ব্যবহার করুন যেটি বিকৃত হওয়ার সুযোগ কম । তাহলে অনেক ঝামেলা থেকে রক্ষা পাবেন। চাকরিতে জয়েন করার পূর্বে এই স্বাক্ষর পরিবর্তন করে প্রয়োজনে নতুন স্বাক্ষর ব্যবহার করতে পারবেন। চাকরিতে জয়েনিং আবেদনে এবং এজি অফিসে যে স্বাক্ষর দিবেন সেটাই আপনার চূড়ান্ত স্বাক্ষর ।
ক্যাডার চয়েজঃ
----------------
খুব গুরুত্বপূর্ণ ধাপ এটি । ভুল চয়েজ দিলে আফসোস করতে করতে পরীক্ষার প্রস্তুতি নষ্ট হয়ে যাবে । তাই প্রতিটা ক্যাডার সম্পর্কে জেনে বুঝে চয়েজ তৈরি করুন ।
কোন ক্যাডারের পোস্ট একটি থাকলে অনেকে সেটি চয়েজে রাখেন না।মনে রাখবেন আপনার প্রয়োজন একটি পোস্ট। তাই একটি পদ থাকলেও চয়েজে রাখবেন।
মনে রাখবেন সঠিকভাবে ,পছন্দ অনুযায়ী ক্যাডার চয়েজ দিয়ে আবেদন করাও বিসিএস প্রস্তুতির অংশ ।কারণ এই ধাপে ভুল করলে টেনশনে পড়াশোনা আর ভালোভাবে হবে না ।
🇧🇩পুনশ্চ:
বিসিএস ক্যাডার হতে গেলে আপনাকে অনেক বেশী জানতে হবে! এজন্য অনেক বেশি তথ্য মাথায় রাখতে হবে যা অসম্ভব !!
১.কি কি বাদ দিতে হবে তা খুঁজে বের করা(বিগত সালের প্রশ্ন পড়লেই বুঝতে পারবেন)
২.সব কিছু জিনিসের কিছু কিছু আর কিছু কিছু বিষয়ের সব কিছু জানতে হবে।অর্থা্ৎ গুরুত্তপূর্ণ বিষয় গুলোর গভীরে যেতে হবে।এটাও বুঝতে পারবেন লিখিত ও প্রিলির বিগত প্রশ্ন থেকেই।
৩.যা শিখবেন স্পষ্ট করে শিখবেন কোন কনফিউসন রাখবেন না, কনফিসন হলেই নেটে বেশি বেশি সার্চ দিন।
৪.গ্রুপ স্টাডি করবেন আর বেশি বেশি এক্সাম দিন/ প্রশ্ন সলভ করুন।
৫.যে কোন বিষয় বিশ্লেষন করার ক্ষমতা বাড়ান
৬.ইংরেজীতে ও গণিতে দক্ষতা বাড়ান
৭.প্রতিদিন কিছু শব্দভান্ডার বাড়ান ও ইংরেজীতে কিছু না কিছু লিখুন,আর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভালো ভাবে প্রেজেন্ট করার চেষ্টা করুন এতে মুখের জড়তা কেটে যাবে।
৮.প্রতিদিনের নতুন নতুন জানা জ্ঞানকে নোট করুন( প্রত্যেক বিষয়ের জন্য আলাদা আলাদা)
৯.অযথা কোন কিছুর ছন্দ মুখস্ত করতে যাবেন না, তবে খুব ছোট হলে ভিন্ন কথা। কঠিন বিষয় গুলোকে নিজের পরিচিত কোন কিছু/ কারো সাথে মিল রাখার চেষ্টা করুন।
সবার সফলতা ও সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।
🇧🇩কোচিং করবেন নাকি করবেন না?
যদি নিজ দায়িত্ব নিয়ে সিলেবাস ভাগ করে রুটিন করে পড়তে পারেন তবে কোচিং করার প্রয়োজন নেই। তবে সেটা না পারলে করতে পারেন। কনফিডেন্স বা ওরাকল অথবা যেকোন কোচিং যেটা আপনার ভাল মনে হয়।
🇧🇩Silence & Smile are two powerful words.Silence avoids problem & smile solves problem. এ দুটোর সাথে patience যোগ করে, তিনটি জিনিস নিজের সাথেই রাখুন।
🇧🇩বিঃ দ্রঃ যে সকল প্রার্থী সাধারণ ও প্রফেশনাল/টেকনিক্যাল উভয় ক্যাডারের পদের জন্য পছন্দ দিতে ইচ্ছুক তাদেরকে সাধারণ ক্যাডারের ৯০০ নম্বরের অতিরিক্ত ২। চ)“সংশ্লিষ্ট পদ বা সার্ভিসের জন্য প্রাসঙ্গিক” একক বিষয়ের ২০০ নম্বরের ৪ ঘণ্টার লিখিত পরীক্ষা দিতে হবে।
শাহীন আলম
৩৫তম বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা)
সংগৃহীত

Comments
Post a Comment