Translate

ব্যাংক_নিয়োগ_প্রস্তুতিঃ

 #ব্যাংক_নিয়োগ_প্রস্তুতিঃ #সিনিয়র* অফিসার/ অফিসার# *(আবেদন ও ব্যাংক নির্বাচন)

photo©pixabay


☎️ প্রাককথনঃ 


বিসিএস ব্যতীত বড় নিয়োগের মধ্যে ব্যাংকের নিয়োগের মত বড় নিয়োগ আর নেই। ব্যাংক পরীক্ষায় বেশ দ্রুত নিয়োগ হয় এবং অনেক পদ থাকায় একটু পরিশ্রম করলেই চাকরী পাওয়া যায়। পাশাপাশি বিএসসি তথা ব্যাংকাস সিলেকশন কমিটি (বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি ডিপার্টমেন্ট) মাধ্যমে নিয়োগ হওয়ায় এখানে সুপারিশ, ঘুষ, দুর্নীতির সুযোগ নেই। শুরুতেই ৯ম/ ১০ম গ্রেডের চাকরী হলেও আপনি একটা কাঠামোর মধ্যে থাকায় বেশ দুর্নীতি মুক্ত সৎ পরিবেশে চাকরী জীবন শেষ করতে পারবেন। সৎ ভাবে চাকরী করে বাড়ি গাড়ি করতে পারবেন। সামাজিক গ্রহণ যোগ্যতা এবং মর্যাদাও থাকবে। করোনার কারণে একটু নিয়োগ দীর্ঘ হচ্ছে কিন্ত অচিরেই তা কেটে যাবে। অনেকে ব্যাংকের চাকরী বোরিং বা একঘেয়ে মনে করেন কিন্ত তা নয়। এখানেও বেশ চ্যালেঞ্জ আছে। আর সরকারী ব্যাংকে পারফর্মেন্স করতে পারলে আপনি দ্রুত প্রমোশন পাবেন।  কর্ম পরিবেশ আগে যাই থাকুক না কেন বিগত দশকে মেধাবী ছেলে মেয়ে এখানে যোগদান করায় বর্তমানে কর্ম পরিবেশ বেশ ভাল। 


#আবেদনঃ 


বর্তমানে সিনিয়র অফিসার এবং   অফিসার পদে আবেদন চলছে। বিস্তারিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে পাবেন। আবেদন ফি ২০০ টাকা।


🚾 ব্যাংক আবেদনে পছন্দক্র 🚾


পছন্দক্রম আপনি আপনার মত সাজিয়ে নিয়েন। সব থেকে ভালো হয় আপনি ব্যাংক/ আর্থিক প্রতিষ্ঠান গুলোর ওয়েবসাইট দেখে চয়েস দিলে। অনেক তথ্য পাবেন আপনি। তারপরও আমি ব্যাঙ্কগুলোর অবস্থা সংক্ষেপে তুলে ধরছিঃ


💠 সোনালী ব্যাংকঃ 


রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মধ্যে সব চেয়ে বড় এবং বেশী শাখা এই ব্যাংকের। এই ব্যাংকে চাকরী হলে আপনি বাসার পাশে চাকরী করতে পারবেন (আপনার বাড়ি প্রত্যন্ত গ্রামে হলেও দেখবেন কাছাকাছি শাখা আছে)। এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের এজেন্ট হিসেবে বিবিধ সরকারী সেবা প্রদান করে। এর মোটামুটি সব প্রক্রিয়াই অনলাইন। তাই আপনি ম্যানুয়ালি কাজ করার ঝামেলা থেকে বাঁচবেন। তবে বিবিধ সরকারী কাজ করতে হয় বলে এতে শাখা ভেদে চাপ বেশী। বিশেষত অর্থবছর শেষে এবং ডিসেম্বরে কাজের চাপ বেশী থাকে। মানুষকে সেবা করার ইচ্ছা থাকলে এবং ব্যাংকিং শিখতে চাইলে সোনালী ব্যাংক আপনার পছন্দের শীর্ষে থাকবে। সরকারী বেতন ভাতা এই ব্যাংকের মাধ্যমে দেয়া হয় বলে স্থানীয় নেতা, ওসি তথা সরকারী কর্মচারীর নিকট আপনি পরিচিত হবেন। সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা বেশ ভালোই, অবিবাহিত গণ ভালো পাত্র/ পাত্রি পাবেন।   শাখা বেশী হওয়ায় দেশের যেকোনো প্রান্তে গেলেই আপনি সোনালী ব্যাংকের লোক পাবেন। আপনার একটি শক্ত নেটওয়ার্ক তৈরি হবে। হুইসেল ব্লয়ার পলিসি থাকায় আপনি নিজে দুর্নীতি মুক্ত থাকতে পারবেন, আপনার শাখার পরিবেশকেও দুর্নীতি মুক্ত রাখতে পারবেন। 

প্রমোশন পলিসি বেশ ভালো। ডিপ্লোমা করা থাকলে এবং ভালো কাজ জানলে প্রতি ৪/৫ বছরে প্রমোশন পাবেন। সিনিয়র অফিসার থেকে ডিএমডি এবং অফিসার থেকে এজিএম/ ডিজিএম হতে পারবেন। ৫ বছরে বাড়ির লোণ এবং  এজিএম হলে গাড়ির লোণ পাবেন। 

তাই যারা বাড়ির কাছে থাকতে চান এবং ব্যাংকে ক্যারিয়ার গড়তে চান তারা সোনালী ব্যাংক পছন্দ করতে পারেন। কিন্ত একটু রিলাক্স জীবন যাপন করতে চাইলে শেষে দিবেন। এখানে আপনি ছুটি পাবেন না বললেই চলে। আবার এলাকার পাতি নেতার ঝারি খাওয়াও লাগতে পারে। নারীরা এই ব্যাংক একটু শেষে দিয়েন। আগে সিপিএফ ছিল এখন জিপিএফ মানে পেনশন পাবেন। ইনসেন্টিভ আছে এবং তা সব ব্যাংকের থেকে বেশী।


💠 জনতা ব্যাংক লিঃ 


আকাশী রঙের এই ব্যাংকটির কর্ম পরিবেশ বেশ ভাল। সব শাখাই অনলাইন। এখানে সরকারী বিল নেয়া হয় তাই মাসের প্রথমে একটু চাপ থাকে। প্রমোশন পলিসি বেশ ভাল, শাখা গুলো শহর বা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক তাই গ্রামে শাখা নেই। এখানে যোগদান করলে আপনাকে প্রথম ২ বছর বাধ্যতামূলক ক্যাশে কাজ করতে হবে (সিনিয়র অফিসার/ অফিসার সবাইকে)। প্রমোশন পলিসি বেশ ভালো। ডিপ্লোমা করা থাকলে এবং ভালো কাজ জানলে প্রতি ৪/৫ বছরে প্রমোশন পাবেন। যদিও বিগত বছর গুলোতে বেশ বড় বড় নিয়োগ হয়েছে তাই প্রমোশন একটু ধীরগতির হবে। সিনিয়র অফিসার /অফিসার থেকে এজিএম/ ডিজিএম হতে পারবেন। ৫ বছরে বাড়ির লোণ এবং  এজিএম হলে গাড়ির লোণ পাবেন। কাজের চাপ সোনালী ব্যাংক থেকে তুলনামূলক কম। নারীদের জন্য বেশ ভাল। আগে সিপিএফ ছিল এখন জিপিএফ মানে পেনশন পাবেন।ইনসেন্টিভ আছে। 


💠 অগ্রণী ব্যাংকঃ


এক সময় দেশের সবথেকে ডাকসাইটে ব্যাংক ছিল যা এখন সোনালী ব্যাংক (কারণ সোনালী ব্যাংক অনেক সরকারী ভাতা দেওয়ায় এটা বেশ পরিচিতি পেয়ে গেছে)। বর্তমানেও বেশ ভালো অবস্থানে আছে। বেশ কিছুদিন নিয়োগ বন্ধ থাকায় এখানে প্রমোশন বেশ ভালো পাবেন। শাখা সোনালী ব্যাংকের মত অনেক এবং অনেক শাখা গ্রাম/ বাজার কেন্দ্রিক আছে। ভালো ডিপোজিট বেজ রয়েছে ব্যাংকটির। ব্যাঙ্কটি পদ্মা সেতু তৈরিতে প্রয়োজনীয় ডলার যোগান দিয়েছে, বুঝতেই পারছেন এর দক্ষতা এবং গ্রহণ যোগ্যতা। খেলাপি ঋণ তুলনামূলক কম। কাজের চাপ শাখা ভেদে কম/ বেশী। কর্ম পরিবেশ মোটামুটি ভালো। জিপিএফ সুবিধা আছে। ইনসেন্টিভ আছে। 


💠 রূপালী ব্যাংকঃ


রূপালী ব্যাংক কে বলা হয় সরকারী প্রাইভেট ব্যাংক। শাখার কর্ম পরিবেশ ভাল। কাজের চাপ তুলনা মূলক কম। শাখা কম থাকায় প্রথমেই দুরের শাখায় পোস্টিং দেয়া হয়। এখানে প্রমোশন পলিসি বেশ ভালো। প্রতি বছর ডিএমডি/ ডিজিএম এই ব্যাংক থেকেই বেশী প্রমোশন পায়। নারীরা পছন্দে উপরে রাখতে পারেন। প্রথম থেকেই জিপিএফ ছিল মানে পেনশন পাবেন।ইনসেন্টিভ আছে। 


💠 বিডিবিএলঃ


বিশেসায়িত ব্যাংক তাই শাখা সব শহর কেন্দ্রিক এমনটি ভুল। ৫০ এর মত শাখা তার কিছু আবার পল্লী/ বাজার কেন্দ্রিক। সুতরাং এখানে বাড়ির কাছে থাকা বা বদলী হয়ে আসা বেশ কষ্টের।  রিলাক্সে থাকতে চাইলে এটা পছন্দে উপরে রাখতে পারেন কারণ এর কাজের চাপ তুলনা মূলক কম। আবার বিশেসায়িত ব্যাংক তাই হেড অফিসে কাজ তথা লোক বেশী বলে ঢাকায় পোস্টিঙের সম্ভাবনা থাকে।  শাখা কম হওয়ায় এর কর্মীগণের সুযোগ সুবিধা, প্রমোশন পলিসি ,কমপ্লাইএন্স তুলনা মূলক ভাল। মাঝে বিডিবিএল মারজ হবার কথা শোনা গিয়েছিল। এমন হলে বেশ কিছু সুযোগ সুবিধা পাওয়ার কথা। (লেবার ল অনুসারে) । নতুন ব্যাংক হওয়ায় কর্ম পরিবেশ উন্নত অনেকটা প্রাইভেট ব্যাংকের মত। আর ওই কথাটা জানেন তো বড় মাছের লেজ হবার থেকে ছোট মাছের মাথা হওয়া ভাল অথবা উলটা । সিপিএফ সুবিধা আছে।ইনসেন্টিভ আছে। 


💠 কৃষি ব্যাংকঃ 


আদি ব্যাংক তাই কর্ম পরিবেশ তুলনা মূলক খারাপ। অনেক অনেক শাখা তাই এটাতেও আপনি বাড়ির কছে থাকতে পারবেন। পুরা সরকারী চাকরীর ফিলিংস পাবেন। কাজের চাপ মোটামুটি। এখনও অনেক শাখা অনলাইন নয়। একেবারে গ্রামে গিয়ে কাজ করতে হবে। তবে কাজ করতে পারলে খুব দ্রুত প্রমোশন পাবেন কেননা এখানে লোক বেশী থাকলেও কাজের লোক কম। একি সাথে সোনালী ব্যাংকে ঢুকে কেউ ১ টি প্রমোশন পেয়েছে আর কৃষি ব্যাংকে ৩ টি প্রমোশন পেয়েছে এমন হয়েছে। দুর্নীতি আছে প্রচুর তাই একটু সাবধানে থাকতে হবে। সরকারী চাকরীর সুবিধা ব্যাংকে নিতে চাইলে কৃষি ব্যাংক সবার উপরে দিতে হবে। টার্গেটের প্যারা নাই। কৃষকের উন্নয়ন তথা কৃষির উন্নয়ন করে দেশ সেবার সুযোগ রয়েছে। লোক বল বেশ কম তাই এখানে প্রমোশন ও অন্যান্য সুবিধা ভাল । গ্রামে ঋণ আদায়ে যেতে হয় তাই নারীরা একটু ভেবে চিনতে দিয়েন।  পেনশন আছে।ইনসেন্টিভ নাই তবে এরিয়ার বলে কিছু একটা আছে। 


💠 হাউস বিল্ডিং ফাইনান্সঃ


বিশেসায়িত ব্যাংক। শুধু মাত্র গৃহ ঋণ দেয়। তাই কাজের চাপ তুলনামূলক কম/ অন্যদের তুলনায় নেই বললেই চলে। এমনকি এখানে ক্যাশ ফাংশন নেই।  সব শাখা জেলা/ বিভাগ কেন্দ্রিক, তাই নিজ শহরে থাকার সুবিধা আছে।  আমার এক বন্ধুর মা সকালে ওকে স্কুলে দিয়ে ব্যাংকে যেত, স্কুল থেকে নিয়ে বাসায় দুপুরের খাবার খাইয়ে ব্যাংকে যেত। সবাই আপনার পিছনে ছুটবে ঋণ নেয়ার জন্য। বন্ধু মহলে আপনি একজন অভিজাত লোক হবেন। পেনশন আছে, প্রমোশন পলিসি বেশ ভাল।সিট কম থাকায় উপরের দিকে দিতে হবে।


💠 প্রবাসী কল্যান ব্যাংকঃ


 বিশেসায়িত ব্যাংক।৬০/৭০ টি শাখা এবং সবগুলো সহর কেন্দ্রিক। তৃতীয় প্রজন্মের ব্যাংক হওয়ায় এখানে কর্ম পরিবেশ ভাল। নারীগণ পছন্দে উপরে রাখবেন। বিদেশ গামি লোকজন আপনাকে খুজবে। দেশের অন্যতম বৈদেশিক মুদ্রার সংস্থান রেমিটেন্স প্রবাহে বড় ভুমিকা রাখবেন। এখানে প্রমোশন পলিসি এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বেশ ভাল ও দ্রুত কারণ শাখা বাড়ছে। আগে একক নিয়োগ দিত মানে শুধুই প্রবাসী ব্যাংক এখন সমন্বিত নিয়োগ দিচ্ছে। ইনসেন্টিভ আছে। পেনশন আছে। সিট কম থাকায় উপরের দিকে দিতে হবে।


💠 কর্ম সংস্থান ব্যাংক:


বিশেসায়িত ব্যাংক। শাখা গুলো মোটামুটি সহর কেন্দ্রিক/ জনবহুল জায়গায়। ২৫০ এর মত শাখা তৃতীয় প্রজন্মের ব্যাংক হওয়ায় এখানে কর্ম পরিবেশ মোটামুটি। এখানে পূর্বে কিছু ক্যাশ সহকারী/ সংঘটক নিয়োগ দেয়া হয়েছিল তাই কিছু একটা এই নিয়ে ঝামেলা আছে। আগে লাঞ্চ ভাতা ছিল না এখন আছে, ইনসেন্টিভ নাই, তবে এই বছর থেকে নাকি দেয়া হবে। ঋণ দেয়া এবং ঋণ আদায়ের একটি চাপ রয়েছে। খেলাপি ঋণ কম তবে যা আছে তা আদায়ের বেশ চাপ থাকে। সিট কম থাকায় উপরের দিকে দিতে হবে।


💠 ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন: 


বিশেষায়িত এর বিশেষায়িত। মানে আপনার কোন ট্র্যাডিশনাল ফাংশন নাই। তৃতীয় প্রজন্মের ব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক মানের। ঈদে / পহেলা বৈশাখে উপহার দেয়া হয়। বিভাগীয় পর্যায়ে শাখা। মানে শাখা মোট ৭/৮ টি। অর্থ মন্ত্রনালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন। ওদের ওয়েবসাইট দেখলে বুঝবেন যে এটা খোদ সরকারী প্রতিষ্ঠান/ ব্যাংক নয়। ইনসেন্টিভ আছে সোনালির মত ৪/৫ টা। পেনশন আছে। যদি অভিজাত ব্যাংকিং করতে চান তবে এটা বেস্ট।  সিট কম থাকায় ১ নাম্বারে দিতে হবে এবং ওই রকম পরীক্ষা দিতে হবে। বাড়ি লোণ/ গাড়ি লোণ আছে।       


#চেষ্টা করলাম ব্যাংক গুলো নিয়ে লেখার, এরপর আপনি চিন্তা ভাবনা করে চয়েস দিয়েন।  এরপর একদিন প্রস্তুতি নিয়ে লিখব। আপনাদের সফলতা কামনা করছি –

✍️✍️✍️✍️

শুভ কামনায়-


এস এম মোস্তফা আব্দুল্লাহ


সহকারী পরিচালক-২০২২

বাংলাদেশ ব্যাংক।

এক্স সিনিয়র অফিসার রূপালী ব্যাংক

এক্স অফিসার, সোনালী ব্যাংক

Comments

জনপ্রিয় পোস্ট

অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২২

বিসিএস লিখিত প্রস্তুতি কৌশল

বিসিএস আবেদনের যোগ্যতা, সিলেবাস, ক্যাডার,বুকলিস্ট

বাংলা গুরুত্বপূর্ণ বানান : (১০-৪০তম বিসিএস)

অনুবাদের সেরা কৌশলঃ

পড়া মনে রাখার উপায় ও প্রস্তুতি কৌশল

Real BCS Viva

সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতিঃ

ব্যাংক সার্কুলার নিয়ে সমাচার ও প্রস্ততি

বাংলা একাডেমি পুরস্কার ২০২২